Saturday, August 2, 2025

যারা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চেয়েছে, তাদেরই নাম মুছে গেছে: আনিস আলমগীর

আরও পড়ুন

সাংবাদিক ও কলামিস্ট আনিস আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নেতাদের সম্মান করে, জুলাই চেতনাকে ধারণ করে ছাত্র নেতারা রাজপথে দাপিয়ে বেড়াতে পারতেন, আজ তাদের চলাফেরায় লাগছে সেনাপাহারা। তিনি বলেন, ইতিহাস বলে, যারা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চেয়েছে, তাদেরই নাম মুছে গেছে। এনসিপি কি পারবে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে? আজ সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি একথা বলেন।

আনিস আলমগীর বলেন, এনসিপির প্রধান নাহিদ ইসলাম গোপালগঞ্জ গিয়ে ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’ স্লোগান দিয়েছেন তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে।

সফরের আগে তারা সরাসরি উস্কানি দিয়েছেন, তাদের বিদেশি পীর, দেশীয় পরামর্শদাতাদের উস্কানিতে পা দিয়ে— বঙ্গবন্ধুর নাম গোপালগঞ্জ থেকে মুছে ফেলার কথা বলেছেন। এমনকি জুলাই পদযাত্রার নাম পরিবর্তন করে করেছেন ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’। এটা কোনো নিছক কাকতালীয় ব্যাপার নয়, এটা ছিল প্রতীকী আগ্রাসন।
তিনি বলেন, এইসব উস্কানির প্রতিক্রিয়া কি হয়েছে, এখন তা চোখে পড়ছে।

দেখা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ছাড়া তারা দেশের কোথাও এক পা ফেলতে পারছে না। আর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে—কেন এই নিরাপত্তা? কেন তাদেরকে এমন ভিআইপি সুরক্ষা দিতে হবে? অন্য রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে আগামীতে ক্ষমতায় যেতে চাওয়া বিএনপি, এই প্রশ্ন উঠাচ্ছে জোরেশোরে। তারেক জিয়া দেশে আসলে কি তখন তাকে এসএসএফ দিয়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে, কারণ ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাব্য নেতা হিসেবে তার নামই তো সবার আগে আসছে। সুতরাং তার জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তো সবার থেকে বেশি।

আরও পড়ুনঃ  ২১ দিনে এলো ২০ হাজার ৬০৬ কোটির বেশি রেমিট্যান্স

তিনি আরো বলেন, লক্ষণীয় বিষয় হলো, স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞা করে গোপালগঞ্জে বক্তৃতা দিয়ে এসে নাহিদ এখন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ হিসেবে উপস্থাপন করে একটি রাজনৈতিক ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ভারসাম্য কি আসলেই বাস্তবসম্মত? এদের বক্তব্য এবং কাজকর্মে মনে হয়—শেখ মুজিব ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে! এমনকি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্থাপনা, ভাস্কর্য, আলপনা, মুরাল—সব জায়গা থেকেই বঙ্গবন্ধুর নাম-চেহারা মুছে ফেলার এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতায় নেমেছে তারা। ইউনূস সরকার তাদেরকে খুশি করতে নতুন মুদ্রা থেকেও বঙ্গবন্ধুর ছবি তুলে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ বিরোধিতায় এনসিপি সবচেয়ে সরব দল উল্লেখ করে আনিস আলমগীর বলেন, তাদের বক্তব্যে, কার্যক্রমে, ভাষায় এই বিদ্বেষ ফুটে উঠছে। আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়ার একমাত্র নৈতিক দায়িত্ব যেন তারা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  জাতীয় সমাবেশ যাওয়ার পথে জামায়াত নেতা আবু সাইদ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত

এবং এমন রাজনীতি তাদেরকে আজ চরমভাবে একঘরে করে ফেলেছে—এটা তাদের দেশি-বিদেশি মুরুব্বিরাও বোঝাতে পারেননি।
আওয়ামী লীগকে শেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা নতুন নয় উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, জেনারেল এরশাদের শাসনামলেও এমন প্রচেষ্টা দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধুকে জাতির হৃদয় থেকে মুছে দিতে ফারুক-রশিদদের দিয়ে ফ্রিডম পার্টি বানানো হয়েছিল। আওয়ামী লীগ তখন রাজপথে সেই ফ্রিডম পার্টির বিরুদ্ধে লড়েছিল। সংঘর্ষ হয়েছে, বোমাবাজি হয়েছে, প্রাণহানিও হয়েছে। মনে হচ্ছে, আমরা আবার সেই রকমই একটা সময়ে প্রবেশ করছি। তবে এবার সংঘর্ষের প্রতিপক্ষ বিএনপি বা জামাত নয়, বরং এই নতুন গজিয়ে ওঠা এনসিপি।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু ইতিহাস বলছে, আগের যুদ্ধে আওয়ামী লীগ টিকে গেছে, হারিয়ে গেছে ফ্রিডম পার্টি। আজ যারা ৭১কে পাস কাটিয়ে ‘জুলাই বিপ্লব’-এর নামে এক নতুন মতাদর্শ দাঁড় করাতে চায়, তাদের অবস্থাও খুব ভিন্ন কিছু নয়। জাতীয় নেতাদের সম্মান করে জুলাই চেতনাকে ধারণ করে ছাত্র নেতারা রাজপথে দাপিয়ে বেড়াতে পারত, আজ তাদের চলাফেরায় লাগছে সেনাপাহারা।

আরও পড়ুনঃ  সমকামিতার অভিযোগে ডুয়েটের ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

আনিস আলমগীর বলেন, প্রথম আলো প্রতিদিন জুলাই চেতনাকে সামনে রেখে বিশাল বিশাল রিপোর্ট ছাপাচ্ছে, সরকার মাস জুড়ে জুলাইয়ের নানা কর্মসূচি গিলাতে চাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে জনমানসে এই চেতনার উত্তাপ নেই। বরং অনেকেই বিরক্ত— সেনাপাহারায় ঘুরে সেটা তাদের উপলব্ধি করার কথা নয়। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—ড. ইউনূস সরকারের বিদায়ের পরে এই দলটির ভবিষ্যৎ কী? তাদের পাহারা দেবে কে?

তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামাত কি এই দায়িত্ব নেবে? সন্দেহ আছে। আর যারা একের পর এক মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস করছে, তারা নিজেরাই তাদের গড়া জুলাই স্তম্ভ টিকিয়ে রাখতে পারবে আগামী দিনে? হয়তো পারবে—যদি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ না থাকে। যদি তারা সত্যি সত্যিই ‘মুজিববাদকে’ কবর দিতে পারে। কিন্তু ইতিহাস বলে, যারা বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চেয়েছে, তাদেরই নাম মুছে গেছে। এনসিপি কি পারবে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে দিতে? ফ্রিডম পার্টি এখন কোথায়? এবারের পালা কার?

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ