Saturday, August 2, 2025

ভাই-বোনের খুনসুটির ইতি, চিরনিদ্রায় পাশাপাশি তারা

আরও পড়ুন

যে মা প্রতিদিন ভাই-বোনের খুনসুটি থামিয়ে বলতেন, “ঝগড়া থামাও, এবার পড়তে বসো”—সেই মা তাহমিনা বেগম আজ নির্বাক। বুকভাঙা কান্নায় বারবার ডেকেও আর সাড়া পান না দুই আদরের সন্তানের কাছ থেকে। সন্তান হারানোর এই শোক ভাষায় প্রকাশের নয়।

একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় ঝরে গেল দুইটি কচি প্রাণ—তাহিয়া তাবাসসুম নাদিয়া ও তার ছোট ভাই আরিয়ান আশরাফ নাফি। সোমবার দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী নাদিয়া মারা যায়। আর মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় তার একমাত্র ভাই নাফি।

আরও পড়ুনঃ  দুই মাসের মধ্যে সকল প্রতিষ্ঠানে কমিটি দেবে ছাত্রদল : নাছির

তাদের বাবা সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত আশরাফুল ইসলাম নিরব আর মা তাহমিনা বেগম—দুই সন্তানের জীবনের চারপাশ ঘিরেই ছিল তাদের সব স্বপ্ন-সম্ভাবনা। সেই স্বপ্ন এখন ধ্বংসস্তূপে।

ঢাকার তুরাগ থানার পুকুরপাড় রাজবাড়ি দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের পাশেই নানাবাড়ির কাছের কবরস্থানে পাশাপাশি শায়িত করা হয়েছে ভাই-বোনকে। বুধবার বাদ জোহর ছোট ভাই নাফির দাফন সম্পন্ন হয়; এর একদিন আগেই একই স্থানে দাফন করা হয় বোন নাদিয়াকে।

যে ভাই-বোন একসাথে খেলত, পড়ত, ঝগড়া করত আবার মুহূর্তেই মিলেও যেত—তাদের জীবনের সেই চিরচেনা সঙ্গ এখন নিঃশব্দ। আর কোনোদিন তাদের মধ্যে খুনসুটি হবে না, ভাগাভাগি করে খাওয়া হবে না, কিংবা মা-বাবার কাছে একে অপরের নামে অভিযোগও করা হবে না। এখন তারা পাশাপাশি শুয়ে আছে, শান্ত এক ঘুমে।

আরও পড়ুনঃ  সমকামিতার অভিযোগে ডুয়েটের ৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

এলাকার স্বজন হুমায়ুন হাওলাদার বলেন, “ওদের নিয়ে নিরব ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভোলা ছেড়ে ঢাকায় বসতি গড়েছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন ব্যবসাও। আজ সব শেষ।”

এদিকে, বুধবার দুপুরে ভোলার বাংলাবাজারের ফলাতেম খানম কলেজে নিহতদের স্মরণে আয়োজিত হয় শোক ও দোয়ার মাহফিল। কলেজ অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন উপাধ্যক্ষ সুশান্ত কুমার হাওলাদার, সহকারী অধ্যাপক এবিএম আব্দুস সাত্তার, সিনিয়র শিক্ষক আবুল বাশার, প্রেস ক্লাবের সাবেক সম্পাদক অমিতাভ অপু, শিক্ষক বিল্লাল হোসেন জুয়েলসহ অনেকেই। দোয়া পরিচালনা করেন আবুল বাশার মো. আব্দুস সাত্তার।

আরও পড়ুনঃ  অন্যের স্ত্রী নিয়ে ঘুরতে গিয়ে এসআই ক্লোজড

নিহতদের গ্রামের বাড়িতেও নেমে আসে শোকের ছায়া। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী আর শুভানুধ্যায়ীরা ভিড় করেন তাদের বাড়িতে। ভাই-বোনের ছবি বুকে ধরে বিলাপ করতে থাকেন স্বজনরা। চাচা, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেনসহ পরিবারের সদস্যরা সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

একটি পরিবারের সমস্ত স্বপ্ন মুহূর্তেই ধসে পড়েছে। যে ঘর একসময় ভাই-বোনের হাসি-আনন্দে মুখর ছিল, সেখানে এখন শুধু নিস্তব্ধতা আর স্মৃতির ভার। দুই নয়নের মনি এখন শুধুই স্মৃতি। আর সেই স্মৃতিই বেঁচে থাকবে, অবিরত কান্নার শব্দে।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ